জমির মালিক হিসেবে নিম্নবর্ণিত বিষয়ে আপনার ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি।

 

ভূমি: জমিদারী অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর ২(১৬) ধারা অনুসারে ভূমি বলতে চাষ করা হয় না অথবা বছরের কোন সময় জলমগ্ন থাকে এরুপ জমি বাড়ি ঘর, দালান – কোঠা, মাটির সঙ্গে সংযুক্ত অন্যান্য জিনিস বা মাটির সঙ্গে সংযুক্ত জিনিসের সঙ্গে স্থায়ীভাবে আটকানো কোন জিনিস ভূমির অন্তরগত।

 

ভূমি জরিপ: জমিদারী অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ সার্ভে এন্ড সেটেলমেন্ট ( এস.এস) ম্যানুয়াল ১৯৩৫, সার্ভে এক্ট ১৮৭৫ প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৫৫ এবং অপরাধ জরিপ আইনের বিধান মতে মৌজা ভিত্তিক ভূমির রেকর্ড তথা খতিয়ান ও নকসা প্রস্তুতের কার্যক্রমকে বলা হয় ভূমি জরিপ।

 

নকসা: নকসা হলো কোন মৌজা ভুক্ত ভূমির বাস্তব চিত্র বা ভূ-চিত্র।

 

মৌজা: মৌজা হলো জরিপের একটি ভৌগলিক ইউনিট। একটি ইউনিয়নকে কয়েকটি মৌজায় বিভক্ত করে এ ভৌগলিক ইউনিট করা হয়।

 

জে এল নং: উপজেলার অন্তর্গত মৌজা সূমহের পরিচিত মূলক ক্রমিক নম্বরকে বলে জে,এল,নং( জুরিশিয়াল লিস্ট নম্বর) মৌজার উত্তর পশ্চিম কোণ থেকে শুরু করে পূর্ব-দক্ষিণ কোণে গিয়ে এ নম্বর দেয়া শেষ করা হয়।

 

খতিয়ান: খতিয়ান হলো দখল স্বত্বের প্রমান্য দলিল। এক বা একাধিক দাগের সম্পূর্ণ বা আংশিক ভূমি নিয়ে এক বা একাধিক ব্যক্তির নামে সরকার বা রাজস্ব অফিসার কতৃক যে ভূমি স্বত্ব প্রস্তুত করা হয় তাকে বলে খতিয়ান। প্রতি খতিয়ানের একটি পৃথক পরিচিত নম্বর থাকে। খতিয়ানকে “ রেকর্ড অব রাইটস” বা “স্বত্বলিপি” বলা হয়। খতিয়ান হচ্ছে নিখুত মালিকানা স্বত্ব ও দখলী স্বত্বের প্রমান্য দলিল। খতিয়ানে তৌজি নম্বর, জে,এল নম্বর স্বত্বের বিবরন, মালিকের নাম, পিতার নাম, ঠিকানা থাকে। খতিয়ানের অপর পৃষ্ঠায় দাগ নম্বর , প্রত্যেক দাগের উত্তর সীমা(উত্তর দাগ), ভূমির শ্রেনী, দখলদারের নাম, ভূমির পরিমাণ, হিস্যা হিস্যা মতে পরিমাণ লেখা থাকে। উপযুক্ত আদালত কর্তৃক ভূল প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত খাতয়ান নির্ভূল হিসাবে গণ্য হতে থাকে।

 

দাগ নম্বর: একটি মৌজার বিভিন্ন মালিকের বা একই মালিকের বিভিন্ন শ্রেণিভুক্ত ভূমিতে নকসায় যে পৃথক পরিচিতি নম্বর দ্বারা চিহ্নিত করা হয় তাকে বলে দাগ নম্বর।

 

বাটা দাগ: নকসায় ভূলবশত কোন প্লটের নম্বর বাদ পড়লে মৌজার শেষ প্লট নম্বরটি পরের নম্বর নিচে এবং বাদ পড়া প্লটের ঠিক উপরের প্লটের নম্বরটি উপরে লিখে ( ভগ্নাংশের ন্যায়) প্রাপ্ত যে নম্বর দিয়ে বাদ পড়া প্লটটি চিহ্নিত করা হয় তাকে বলে বাটা দাগ।

 

ছুট দাগ: নকসায় দাগ নম্বর বসানোর সময় ভূলবশত: কোন একটি অংক/সংখ্যা বাদ পড়লে অর্থাৎ ছুটে গেলে তাকে বলে ছুট দাগ। অর্থাৎ ঐ নকসায় ৪ নম্বরের নামে কোন প্লটের অস্তিত্বে নেই।

 

পর্চা: জরিপ চলাকালীন সময়ে ভূমি মালিককে প্রস্তুতকৃত খসড়া খতিয়ানের যে অনুলিপি দেওয়া হয় তাকে বলে পর্চা। পর্চা জরিপ কর্মচারী কর্তৃক অনুস্বাক্ষরিত হওয়া উচিত।

 

হোল্ডিং: একটি খতিয়ানের একটি দাগ থাকতে পারে আবার একাধিক দাগও থাকতে পারে। এরূপ একটি খতিয়ানের অন্তর্ভূক্ত ভূমিকে হোল্ডিং এর পরিচিতি নম্বরক হোল্ডিং নম্বর বলে।

 

দাখিলা: ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের বিপরীতে প্রদত্ত রসিদকে বলে দাখিলা বা আর, আর(রেন্ট রিসীট) দাখিলা ভূমি মালিকানা প্রমানের প্রাথমিক দলিল।

 

ডি.সি.আর: ভূমি উন্নয়ন কর ব্যতীত অনান্য সরকারী পাওয়া আদায়ের জন্য যে রসিদ দেয়া হয় তাকে বলে ভি.সি.আর (ডুপ্লিকেট কার্বন রিসীট)।

 

কবুলিয়াত: কবুলিয়ন হচ্ছে এক ধরনের শর্তযুক্ত চুক্তি নামা। যা রায়ত কর্তৃক সরকার (পূর্বে জমিদারকে দিত) বরাবরে দেয়া হয়।

 

ফিল্ড বুক: জরিপের প্রয়োজনে কিস্তোয়ার কালে অফসেট গ্রহনসহ চলমান চেইনের রিডিং লিখনের যে বই ব্যবহৃত হয়, তাকে বলে ফিল্ড বুক। এটি দেখে পরবর্তীতে টেবিলে পি-৭০ সীটে স্বহস্তে নকসা অংকন করা হয়। (জরিপ চলাকালে আমিনের জন্য এর ব্যবহার নিষিদ্ধ)।

 

উল্লেখিত বিষয়ে ধারণা থাকলে হয়তো প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।